ঈদের রাতে কিয়ামুল লাইল পালনের ফযিলত সংক্রান্ত একটি দুর্বল হাদিস

প্রশ্ন ঈদের রাতে কিয়ামুল লাইল পালনের ব্যাপারে উদ্ধৃত হাদিসটি কি সহিহ? আলহামদু লিল্লাহ।. এ হাদিসটি আবু উমামা (রাঃ) থেকে ইবনে মাজাহ (১৭৮২) সংকলন করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায় কিয়াম পালন করবে যেই দিন অন্তরগুলো মরে যাবে সেইদিন তার অন্তর মরবে না।”…

প্রশ্ন

ঈদের রাতে কিয়ামুল লাইল পালনের ব্যাপারে উদ্ধৃত হাদিসটি কি সহিহ?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এ হাদিসটি আবু উমামা (রাঃ) থেকে ইবনে মাজাহ (১৭৮২) সংকলন করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায় কিয়াম পালন করবে যেই দিন অন্তরগুলো মরে যাবে সেইদিন তার অন্তর মরবে না।”

এটি একটি দুর্বল হাদিস। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ নয়।

ইমাম নববী “আল-আযকার” কিতাবে বলেন:

“এটি একটি দুর্বল হাদিস। এটি আবু উমামা (রাঃ) থেকে আমাদের কাছে মারফু হাদিস ও মাওকুফ হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। উভয়টি দুর্বল।”[সমাপ্ত]

হাফেয আল-ইরাকী ‘তাখরিজু আহাদিছি ইহইয়া উলুমুদ্দীন’ গ্রন্থে বলেন: এর সনদ দুর্বল।

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: এটি একটি গারীব ও মুযতারিব (দোদুল্যমান) সনদের হাদিস।[দেখুন: আল-ফুতুহাত আর্‌-রাব্যানিয়্যাহ (৪/২৩৫)]

আলবানী হাদিসটিকে ‘যয়ীফ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন: মাওযু (বানোয়াট)।

তিনি “সিলসিলাতুল আহাদিছিয যায়ীফা” গ্রন্থে (৫২১) বলেন: খুবই দুর্বল।

হাদিসটি তাবারানী উবাদা বিন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের রাত ও ঈদুল আযহার রাত ইবাদতে কাটাবে যেই দিন মানুষের অন্তর মরে যাবে সেই দিন তার অন্তর মরবে না।” এটিও দুর্বল হাদিস।

হাইছামী “মাজমাউয যাওয়ায়েদ” গ্রন্থে বলেন: হাদিসটি তাবারানী ‘আল-কাবির’ ও ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসের সনদে রয়েছে: উমর বিন হারুন আল-বালখি। তার বেশিরভাগ বর্ণনা দুর্বল। ইবনে মাহদি ও অন্যান্য আলেম তার সুনাম করেছেন। কিন্তু অনেক সংখ্যক আলেম তাকে দুর্বল বলেছেন। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

এ হাদিসটিও আলবানী ‘সিলসিলাতুল আহাদিছিয যায়ীফা’ গ্রন্থে (৫২০) উল্লেখ করে বলেছেন: মাওযু (বানোয়াট)।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন:

আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: দুই ঈদের রাত নামায ও অন্য ইবাদতে কাটানো মুস্তাহাব। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ এর সপক্ষে আবু উমামা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস দিয়ে দলিল দেন যে: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতকে ইবাদতে কাটাবে যেই দিন মানুষের অন্তরগুলো মরে যাবে সেই দিন তার অন্তর মরবে না”। শাফেয়ি ও ইবনে মাজাহ এর বর্ণনায় রয়েছে যে: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায় কিয়াম পালন করবে যেই দিন অন্তরগুলো মরে যাবে সেইদিন তার অন্তর মরবে না।” এটি আবুদ দারদা থেকে মাওকুফ হাদিস হিসেবে বর্ণিত আছে। আবু উমামা থেকে মাওকুফ ও মারফু উভয়ভাবে বর্ণিত আছে; যেমনটি পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সকল বর্ণনার সনদ দুর্বল।[সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

“ঈদের রাতের (ইবাদত) সম্পর্কে যত হাদিস উল্লেখ করা হয় সবগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার।”[সমাপ্ত]

তার অর্থ এ নয় যে, ঈদের রাতে কিয়ামুল লাইল পালন করা মুস্তাহাব নয়। বরং প্রত্যেক রাতেই কিয়ামুল লাইল পালন করার বিধান রয়েছে। এ কারণে সকল আলেম একমত যে, ঈদের রাতে কিয়ামুল লাইল পালন করা মুস্তাহাব; যেমনটি “আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা” গ্রন্থে (২/২৩৫) উদ্ধৃত হয়েছে। পূর্বোক্ত আলোচনার উদ্দেশ্য হল: ঐ রাতের ফযিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসটি দুর্বল।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *