গোশত দিয়ে ফিতরা আদায় করলে কতটুকু পরিমাণ আদায় করতে হবে
প্রশ্ন ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: ‘গোশত দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয’। ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন গ্রন্থে (৩/১২) বলেন: যদি তাদের খাদ্য হয় শস্যদানা ছাড়া অন্য কিছু যেমন- দুধ, গোশত, মাছ তাহলে তারা যেটা তাদের খাদ্য হয় সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করবে…”। আমার প্রশ্ন হচ্ছে—আমি যদি গোশত দিয়ে ফিতরা দিতে চাই তাহলে আমি কি ২.৫ গ্রাম গোশত ফিতরা…
প্রশ্ন
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: ‘গোশত দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয’। ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন গ্রন্থে (৩/১২) বলেন: যদি তাদের খাদ্য হয় শস্যদানা ছাড়া অন্য কিছু যেমন- দুধ, গোশত, মাছ তাহলে তারা যেটা তাদের খাদ্য হয় সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করবে…”। আমার প্রশ্ন হচ্ছে—আমি যদি গোশত দিয়ে ফিতরা দিতে চাই তাহলে আমি কি ২.৫ গ্রাম গোশত ফিতরা দিব? নাকি এক স্বা’ চালের যে দাম হয় সেটা নগদ মুদ্রাতে হিসাব করে সে অর্থ দিয়ে গোশত খরিদ করে দিব?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ইতিপূর্বে 99327 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যাদের খাদ্য গোশত তাদের জন্য গোশত দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয।
দুই:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসসমূহে এসেছে— খাদ্যদ্রব্যের ফিতরার পরিমাণ এক স্বা’ হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। যদি কোন মুসলমান গোশত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চায় যেসব জিনিস ওজন করে বিক্রি করা হয় তাহলে ওজনের মাধ্যমে ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“কিন্তু সমস্যা হল, গোশত তো আর স্বা’ দিয়ে মাপা যায় না। তাই আমরা বলব: যদি পাত্র দিয়ে মাপা সম্ভব না হয়; তাহলে ওজন করব।”[আল-শারহুল মুমতি (৬/১৮২) থেকে সমাপ্ত]
আলেমগণ গোশত দিয়ে ফিতরা আদায় করলে পরিমাণ কতটুকু হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। মালেকী মাযহাবের গ্রন্থ ‘হাশিয়াতুদ দুসুকি’ তে (৫/৩৬) এসেছে— “তাঁর কথা: গোশত জাতীয় খাদ্য ওজন দিয়ে” অর্থাৎ গোশত ও এ জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ হলে সেটি বাগদাদী ওজনে 5রতল ফিতরা হিসেবে আদায় করতে হবে।[সমাপ্ত]
রতল: এটি ওজনের একক। আবার এটি আয়তনেরও একক। বহু গবেষকের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাগদাদী রতল হচ্ছে— ৪০৮ গ্রাম।
দেখুন: ‘মাজাল্লাতুল বুহুস ইসলামিয়্যা’, সংখ্যা-৩৯ ও ৫৯।
এ হিসাব অনুযায়ী গোশতের ফিতরার পরিমাণ হবে—২১৭৬ গ্রাম।
উল্লেখ্য, (আয়তনের একক) স্বা’কে ওজনের এককে রূপান্তর করাটা আনুমানিক। কেননা স্বা’ এর মধ্যে যা কিছু মাপা হয় সেটার ভরের ভিত্তিতে ওজনের তারতম্য ঘটে। তাই কোন মুসলিম যদি সতর্কতামূলকভাবে কিছুটা বেশি আদায় করে সেটাই উত্তম।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:আমরা দলিল প্রমাণ উল্লেখ করেছি যে, এক স্বা’ হচ্ছে- 5ইরাকী রতল। মূলতঃ স্বা’ হচ্ছে আয়তনের একক। আলেমগণ এর ওজন উল্লেখ করেছেন যাতে করে, এ হিসাব মুখস্থ রাখা যায় এবং অন্যদের কাছে তথ্যটি পৌঁছিয়ে দেয়া যায়।
একদল রাবী ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: আমি স্বা’ এর মধ্যে গম ওজন করে 5রতল পেয়েছি। তিনি আরও বলেন: আমরা ডালকে একক হিসেবে গ্রহণ করেছি। যেহেতু পরিমাপের ক্ষেত্রে ডাল সবচেয়ে উত্তম। কারণ ডাল এর আয়তনের চেয়ে বেশি ফুল-ফেঁপে থাকে না। তাই আমরা প্রথমে এক স্বা’ ডাল মেপে নিয়েছি, তারপর সে ডালকে ওজন করে দেখি: 5রতল। সুতরাং এক স্বা’ গম ও ডাল এর ওজন যদি হয় 5রতল; তাহলে ফিতরার অন্য শ্রেণীর খাদ্যের ওজন এর চেয়ে বেশি হবে না। যেহেতু এ দুইটি সবচেয়ে ভারী এবং অন্য খাদ্যগুলো এ দুটির চেয়ে হালকা। অতএব, কেউ যদি 5রতল গম বা ডাল আদায় করে তাহলে সেটা এক স্বা’ এর চেয়ে বেশি হবে…। তবে, উত্তম হচ্ছে, যে ব্যক্তি ভারী জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করবে সে ক্ষেত্রে তিনি সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং একটু বেশি দিবেন; যাতে করে সে নিশ্চিত হতে পারে যে, পূর্ণ এক স্বা’ আদায় করা হয়েছে।
[আল-মুগনী (৪/২৮৭) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহই ভাল জানেন।